টানা দুই সপ্তাহ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চলে গেলেন তিনি

টানা ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (১৩ জুন) সকালে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় গণমাধ্যমকে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত ১ জুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তির পর নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস পজিটিভ আসে মোহাম্মদ নাসিমের। এরপর ৮ জুন নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসে। সবশেষ গত বুধবারের পরীক্ষায় আবারও করোনা নেগেটিভ আসে। টানা দুইবারের পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসলেও তার শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। বরং অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকেই যাচ্ছিল।

এ অবস্থায় ৭২ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাসিমকে পরিবারের সদস্যরা সিঙ্গাপুরে পাঠানোর ইচ্ছা পোষণ করলেও তার শারীরিক অবস্থার কারণে শেষ পর্যন্ত সেটি আর সম্ভব হয়নি।

এর আগে গেল করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ৪ দিনের মাথায় গত ৪ জুন নাসিমের ব্রেইন স্ট্রোক হলে পরদিনই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর থেকেই তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসায় ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। গত কয়েকদিন ধরেই চিকিৎসকরা নাসিমের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আশঙ্কার প্রকাশ করছিলেন।

সবশেষ গতকাল শুক্রবার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। বরং অবস্থা আরও অবনতির দিকে। তিনি ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’ রয়েছেন।’

গতকালই নাসিমের সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চায় তার পরিবার। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, শনিবারই বনানী কবরস্থানে নাসিমের দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, ‘নাসিম ভাইয়ের মৃত্যুর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনার ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আজকেই বনানী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হবে।’

এদিকে বরেণ্য এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গভীর শোক প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বলেও জানান বিপ্লব বড়ুয়া।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় ৪ নেতার একজন শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পঞ্চমবারের মতো সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মন্ত্রিসভায় তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে তিনি একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় তার নাম আসেনি। তবে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

মৃত্যুকালে দেশের এই হাইপ্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।